পুরুষদের যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ কী?

যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া বা এ ধরনের কোন কাজে উৎসাহ না পাওয়ার মতো উপসর্গ অনেকের মধ্যে থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ কী তা জানেন না অনেকেই। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা এবং চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের উপসর্গের পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে টেস্টোস্টেরন নামে এক ধরনের লিঙ্গ নির্ধারণী হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া। একে বলা হয় টেস্টোস্টেরন ঘাটতি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, মায়ের পেটে থাকার সময় একটা শিশু পুরুষ নাকি নারী হবে-সেটাও এই হরমোনের প্রভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হতে থাকে।
“বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত এই হরমোন খুব বেশি মাত্রায় না বাড়লেও ছেলেদের মধ্যে এটির মাত্রা বেশি থাকে। বয়ঃসন্ধিকালের পর এই হরমোনের মাত্রাটা হঠাৎ করে বেড়ে যায় এবং সে একজন পরিপূর্ণ পুরুষ হওয়ার জন্য তৈরি হয়। ওর দাঁড়ি-গোঁফ তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে যৌনাঙ্গের পরিপক্বতা, জননাঙ্গের পরিপূর্ণ আকার, ঘাম, মানসিকভাবে পুরুষালি আচরণ- টোটালটাই এই হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন।
“আমরা সহজ করে বলে থাকি, একটা পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকে টেস্টোস্টেরন লেভেলের উপরে।
এই লেভেলে ঘাটতি হলে বা বেশি হলে সমস্যা হতে পারে। তবে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারো কারো স্বাভাবিক আছে, কারো কারো কম আছে, এই সম্ভাবনাই বেশি।
টেস্টোস্টেরন কী? টেস্টোস্টেরন হচ্ছে এক ধরনের হরমোন যা পুরুষের মধ্যে পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়। এ কারণে একে অ্যান্ড্রোজেন বা সেক্স হরমোন বা লিঙ্গ নির্ধারণী হরমোনও বলা হয়। এই হরমোন অণ্ডকোষে তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টুইন্সবার্গ ফ্যামিলি হেলথ এন্ড সার্জারি সেন্টারের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট কেভিন এম প্যান্টালোন বলেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে।
তবে পুরুষের মধ্যে এই হরমোনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি থাকে। যার কারণে পুরুষের প্রজনন কার্যক্রম বিকাশ লাভ করে ও যৌনাঙ্গ গঠিত হয়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধীনে হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেস্টোস্টেরনের এর ফলে হাড় এবং মাংস পেশীর গঠন প্রভাবিত হয়। ছেলেদের হাড় ও মাংসপেশীর ঘনত্ব বাড়ে, রক্তে লোহিত কণিকার উৎপাদন বাড়ে, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন হয়ে তা ভারী হয়, মুখে দাড়ি হয়, শরীরের অন্যান্য অংশ লোম বাড়ে, যৌনাঙ্গের বৃদ্ধি ঘটে। একই সাথে যৌন ক্রিয়া এবং প্রজনন সক্ষমতা জাগ্রত হয়।
অনেক কিশোরদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সর্বোচ্চ হয় ১৭ বছর বয়সে এবং পরবর্তী দুই বা তিন দশক এর মাত্রা বেশিই থাকে। গড়ে একজন স্বাস্থ্যবান পুরুষ দিনে ছয় মিলিগ্রামের মতো টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করে।
